মাশরাফি বিন মর্তুজা: (জন্ম: অক্টোবর ৫, ১৯৮৩; নড়াইল যশোর জেলা) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ ও একদিনের আন্তর্জাতিকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তার ডাক নাম কৌশিক। তিনি একজন ডান হাতি ব্যাটসম্যান। তার বোলিং এর ধরণ ডান হাতি পেস বোলার। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি এশিয়ান একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক দলে খেলেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
দক্ষিণ-পশ্চিম বংলার নড়াইল জেলায় মাশরাফির জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঁধাধরা পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন, আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা।[২] তারুণ্যের শুরুতে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে; যদিও এখন বোলার হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাত, যেজন্যে তাকে 'নড়াইল এক্সপ্রেস' নামেও অভিহিত করা হয়[২]।বাইক প্রিয় মর্তুজাকে সবাই খুব হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানে। প্রায়অই তিনি বাইক নিয়ে স্থানীয় ব্রিজের এপার-ওপার চক্কর মেরে আসেন। নিজের শহরে তিনি প্রচন্ড রকমের জনপ্রিয়। এখানে তাকে "প্রিন্স অব হার্টস" বলা হয়। এ শহরেরই সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় সুমনা হক সুমির সাথে তার পরিচয় হয়। দু'জনে ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।[৩]
ক্যারিয়ার:
প্রাথমিক ক্যারিয়ার
মর্তুজা বাংলাদেশের সফলতম পেস বোলারদের একজন। আক্রমণাত্নক, গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন, যিনি কিনা তখন দলটির অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ-এ দলে নেয়া হয়।[৪]বাংলাদেশ-এ দলের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ খেলেই মাশরাফি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ৮ নভেম্বর, ২০০১ এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। একই ম্যাচে খালেদ মাহমুদেরও অভিষেক হয়। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার।[৫] মজার ব্যাপার হল, মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল ক্তিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর ত্তীয়। একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট।[৬]
বিপক্ষে ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এর ফলে তিনি প্রায় দু'বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এযাত্রায় তিনি প্রায় বছরখানেক মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।
২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে তিনি স্বরুপে ফেরার ঘোষনা দেন। সেই সিরিজে তিনি ধারাবাহিকভাবে বোলিং করেন এবং তেন্ডুলকর ও গাঙ্গুলীকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনি উইকেট পাননি। এই সিরিজের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি ভালো বল করেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে তার গড় ছিল সবচেয়ে ভাল। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে তিনি অবদান রাখেন। তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে শূন্য রানে আউট করেন এবং দশ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দেন।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে ভালো পেস বোলারের ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশে মোহাম্মদ রফিকের মত আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোন পেস বোলার ছিলনা। মাশরাফি বাংলাদেশের সেই শূণ্যস্থান পূরণ করেন।
২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তিনি এসময় ৪৯টি উইকেট নিয়েছেন।
২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মর্তুজা ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ৩৮ রানে ৪ উইকেট দখল করেন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি খেলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে বিজয়েও মাশরাফির ভূমিকা রয়েছে।
মাশরাফি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির বোলার এবং সমর্থকদের কাছে "নড়াইল এক্সপ্রেস" নামে পরিচিত।
মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ক্যারিয়ার মাইলফলক:
টেস্ট
অভিষেক: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ২০০১একদিনের আন্তর্জাতিক
অভিষেক: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, ২০০১রেকর্ডস ও পরিসংখ্যান:
টেস্ট ম্যাচ
- রেকর্ডস
- বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ নবম উইকেট অংশীদারিত্ব:৭৭ রান শাহাদাত হোসেন বনাম ভারত, ১৮ মে ২০০৭[৭]
- বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১,০০০ বল বা একাধিক (৬৭.২০) স্ট্রাইক রেট।[৮]
- ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার[৯]
তারিখ | প্রতিপক্ষ | মাঠ | রেকর্ড / স্কোরবোর্ড |
---|---|---|---|
১৮–২২ মে ২০০৭ | ![]() |
বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম | ব্যাটিং: ৭৯; বোলিং: ৪/৯৭ এবং ১/৩৬[১০] |
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাসে উঠতে গেলে, অথবা খেলতে গিয়ে পরে গেলে হঠাৎ যদি আমাদের পায়ে আঘাত লাগে, আমরা কয়েকদিন খুব সাবধানে হাঁটি। হয়তোবা আঘাতটা একটু সিরিয়াস হলে দেখা যায় অনেকে সারাজীবন আর বাসেই ওঠেন না। দৌড়ান না। যদি পা টা চিরতরে হারাতে হয়!
হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান হয় না। সে কারণেই একজন খুব পাগলাটে। হাঁটুতে ৭ টা অপারেশন। এক হাঁটুতে ৪ টা, আরেক হাঁটুতে ৩ টা। প্রতি ম্যাচে মাঠে নামার আগে সিরিঞ্জ পুশ করে হাঁটু থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে নেওয়ার সময় অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করেন। সে সময় ভয়ে কোন সতীর্থ তাঁর সামনে যান না। এমন ভয়ও তাঁর আছে, বৃদ্ধ হলে পঙ্গুত্বও বরণ করতে হতে পারে তাঁকে। নাজুক দুটি হাঁটুর উপর অস্বাভাবিক চাপ দেওয়ার কারণে।
কিন্তু তিনি যে অন্যরকম! মাঠে নামার জন্য, বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে একবার, শুধু একবার মাঠে নামার জন্য তাঁর এই কষ্ট, এই আকুতি। ভঙ্গুর, জর্জর দুটি হাঁটু নিয়েও তাই তিনি দৌড়াতে ভয় পান না, ডাইভ দিয়ে লং অনে ক্যাচ ধরতে ভয় পান না। ভয় পান না বাউন্ডারি লাইন থেকে নিশ্চিত ৪ বাঁচিয়ে বলটা তড়িৎগতিতে স্ট্যাম্পের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে। হাঁটুতে ব্যাথা লাগবে? ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে?? চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবেন??? এসব তিনি ভাবেনও না।
আজও তাঁর মাপের আর কোন পেসার আমরা পাইনি। আজও তিনিই একমাত্র পেসার আমাদের, যিনি বল হাতে নিয়ে দৌড় শুরু করলে আমরা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হই। জিম্বাবুয়ের প্রথম দুই ব্যাটসম্যানকে তিনি আজ যেভাবে বোল্ড করলেন, ব্যাটসম্যান যেভাবে বোল্ড হবার পর বসে পরলেন, দৃশ্যটা প্রতীকী। তাঁর চিরন্তন দুর্ভাগ্য, ১৩ বছরে মিস করা ১০৪ টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিস করার হতাশা, দেশের মাটিতে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ মিস করার বোবা কান্না...সব কিছুই আজ যেন তাঁর সামনে বসে পরে তাঁকে কুর্নিশ করলো। ঐ জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যানের রূপে।
যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে থাকার নাম জীবন না। জীবন বয়ে চলা এক নদীর গল্প। মাশরাফির অধিনায়কত্ব, মাশরাফির বোলিং সৌকর্যের কানাকড়িও হয়তো আমরা পাইনি। কিন্তু এখনো যে সব শেষ হয়ে যায়নি! তাই এখনো তিনি দৌড়ান, ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরেন। অসাধারণ ক্যাপ্টেন্সি করে দাপটে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ থেকে বের হন। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন।
২০১৫ বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে টস করতে নামছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা...এটা আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন। আমাদের সবার জাতীয় স্বপ্ন। ম্যাচ জিতি কিংবা হারি পরের ব্যাপার। মাশরাফিরকে ক্যাপ্টেন হিসেবে চাই প্রতিটা ম্যাচে। আরো অনেকদিন। অনেকবার।
দৌড়াও মাশরাফি। আমরা সাথে আছি।
Courtesy- Ishfaq Zaman
0 comments:
Post a Comment